0

প্রতিবছর অসংখ্য নারীপুরুষ হৃদপিণ্ড জনিত সমস্যা, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ, ডায়বেটিস, স্ট্রোক, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ জনিত নানা সমস্যায় অকাল মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু এই ধরণের দীর্ঘমেয়াদী যন্ত্রণাদায়ক রোগগুলো থেকে দূরে থাকা এবং অকাল মৃত্যু ঝুঁকি কমানোর বেশ সহজ একটি উপায় রয়েছে। উচ্চ মাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার অনেকাংশে কমিয়ে দেয় অকাল মৃত্যু ঝুঁকি। প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখলে এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে খুব সহজেই কমিয়ে নেয়া যায় মৃত্যু ঝুঁকি।

সম্প্রতি প্রায় ১ মিলিয়ন মানুষের উপর গবেষণা করে দেখা যায়, যারা প্রতিদিন উচ্চমাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেয়ে থাকেন তাদের মৃত্যু ঝুঁকি অন্যান্যদের তুলনায় বেশ কম থাকে। গবেষণায় থেকে জানা যায়, হৃদপিণ্ড জনিত রোগ, স্ট্রোক, ডায়বেটিস, কিছু ধরণের ক্যান্সার ইত্যাদি ধরণের দীর্ঘমেয়াদী রোগের হাত থেকে আমাদের দেহকে রক্ষা করতে এই উচ্চ মাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বিশেষভাবে কার্যকরী।

অ্যামেরিকান জার্নাল অফ এপিডেমিওলজিতে, চীনের সাংহাই ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের গবেষক ইয়াং ইয়াং বলেন, ‘অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে প্রতিটি মানুষের ডায়াটারি ফাইবার খাওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া উচিত’। গবেষক ইয়াং এর টিম ৫ টি ভাগে ভাগ হয়ে প্রায় ৯৮২,৪১১ নারী ও পুরুষের উপর গবেষণা চালান। তারা দেখতে পান যারা অন্যান্যদের তুলনায় প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় বেশি পরিমাণে ফাইবার রাখেন তারা প্রায় ১৬% কম মৃত্যু ঝুঁকিতে থাকেন। এছাড়াও তারা আরও একটি গবেষণায় দেখতে পান যারা মাত্র ১০ গ্রাম ফাইবার খাওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেন তাদের মৃত্যু ঝুঁকি কমে যায় পুরো ১০%।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার তথ্য মতে একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের প্রতিদিন ৩৮ গ্রাম ফাইবার এবং একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর প্রতিদিন ২৫ গ্রাম ফাইবারের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু অনুন্নত বা অর্ধ উন্নত দেশগুলোতে নারী পুরুষের এই ফাইবার খাওয়ার মাত্রা গড়ে বেশ কম। যার কারণে প্রতিবছর বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন হৃদপিণ্ডের সমস্যা জনিত রোগ, কার্ডিওভ্যস্কুলার রোগ, ক্যান্সার ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যু মুখে পতিত হন অনেক নারীপুরুষ।

ইউনিভার্সিটি অফ লিডস, ইউকে এর পুষ্টিবিদ ভিক্টোরিয়া বার্লে বলেন, ‘প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখলে তা রক্তের কলেস্টোরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ করে এবং ইনফ্লেমেশন জাতীয় সমস্যা কমায়’। এছাড়াও উচ্চ মাত্রার ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গুলো অল্প পরিমাণে খেলেই ক্ষুধা নিবারন করে এবং অনেকটা সময় ক্ষুধার উদ্রেক করে না যার প্রভাব পড়ে আমাদের ওজনের ওপর। অর্থাৎ রোগ দূর করার পাশাপাশি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়তা করে থাকে।

প্রতিদিন মাত্র ১০ গ্রাম ফাইবার বেশি খাওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। বেরি জাতীয় ফল, আপেল, পেয়ারা, আম, পাতাকপি, ব্রকলি, ফুলকপি, ভুট্টা, বীণ, আটার রুটি, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম, চীনাবাদাম, আলু, টমেটো সবুজ শাক এই সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার।

যদিও গবেষকগণ দাবী করেননি, বেশি পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার আয়ু অনেক বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু গবেষণায় প্রমান হয়েছে যে, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে হৃদপিণ্ড জনিত সমস্যা, কার্ডিওভ্যস্কুলার রোগ, ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বেশি জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব যা অনেকাংশে কমায় অকাল মৃত্যু ঝুঁকি।

তবে, নিউইয়র্কের মন্টেফিওরে মেডিসিন সেন্টারের ডায়াটেশিয়াম জেসিকা সাপিরো জানান, ‘যদি আপনি অনেক কম ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে থাকেন তবে হুট করে খাদ্যে ফাইবারের মাত্রা বাড়িয়ে দেবেন না। অল্প অল্প করে ফাইবারের মাত্রা বাড়ান যা আপনার দেহ মানিয়ে নিতে পারে। প্রতি বেলার খাবারে মাত্র ৩ গ্রাম করে ফাইবারের মাত্রা বাড়িয়ে নিন। এতে করে আপনার দেহ অ্যাডজাস্ট করে নেবে ধীরে ধীরে’।

Post a Comment

 
Top