0

বাংলাদেশে ৬টি আইটিসি টেরিস্টোরিয়াল লিংকের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পর থেকেই বিএসসিসিএলের ব্যান্ডউইথের ব্যবহার দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। মাত্র কয়েক মাস আগেও বিএসসিসিএলের ব্যান্ডউইথের ব্যবহার ৪২ জিবিপিএস পেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারির শেষে তা ৩২ জিবিপিএসে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ৬টি আন্তর্জাতিক টেরিস্টোরিয়াল ক্যাবলের মাধ্যমে আমদানি করা ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বেড়ে ৫০ জিবিপিএস হয়েছে। ফলে আবারও দেশের মধ্যে ব্যান্ডউইথের পাইকারি দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত হ্রাস করা মূল্যহার পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন করা হয়েছে।

ব্যান্ডউইথের মূল্য কমানো প্রসঙ্গে ফাইবার অ্যাট হোমের হেড অব পাবলিক রিলেশন অ্যান্ড গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স আব্বাস ফারুক প্রিয়.কমকে বলেছেন, মূল্য কমানোর আগে বিএসসিসিএল এবং ৬টি আইটিসিকে নিয়ে বিটিআরসির বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ ছিল। ব্যান্ডউইথের মূল্য কত হবে এবং বাজারে কত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যাবে তা নির্ধারণ করে দিলে অবৈধ ব্যবসা এবং অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে। অন্যথায় মূল্য কমিয়ে কমিয়ে কোন লাভ হবে না।

গত বছর জানুয়ারিতে বিএসসিসিএলের ৪২ জিবিপিএসেরও বেশি ব্যবহার হওয়া ব্যন্ডউইথ ৩০ জিবিপিএসে নেমে আসে। সব মিলে ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ মাসে স্থানীয় ব্যন্ডইউথের চাহিদা ২৬ শতাংশ কমে গেছে। এর আগে ২০১৩ সালের জুনে দেশীয় ব্যন্ডউইথের ব্যবহার হয়েছিল ৩৮ দশমিক ২৯ জিবিপিএস। আর ২০১২ সালের জুন মাসে ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক ৩৫ জিবিপিএস। ২০১২ সালের ডিসেম্বররে ব্যন্ডউইথ ব্যবহার হয়েছিল ২৩ দশমিক ২৫ জিবিপিএস। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ব্যবহার হয়েছিল ১৫ দশমিক ৩৫ জিবিপিএস। বর্তমানে বিএসসিসিএলের হাতে ২০০ জিবিপিএস ক্ষমতার ব্যন্ডইউথ রয়েছে। আর এর মধ্যে ৩২ জিবিপিএস ব্যান্ডইউথ ব্যবহৃত হচ্ছে। যা মোট ক্ষমতার মাত্র ১৬ শতাংশ। বাকি ৮৪ শতাংশ এখনও অব্যবহৃত। আগামী ২০১৬ সালের মধ্যে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হলে তখন এই ক্ষমতা অনেক বাড়বে। সরকার আশা করছে ২০২১ সাল নাগাদ ব্যবহার বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২২০ জিবিপিএস। তাই ৫০ গিগাবাইটের মত ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ৬টি টেরিস্টোরিয়াল লিংকই দেশীয় ব্যান্ডউইথের বাজার ধ্বংস করে ফেলছে। তিনি দাবি করেন, অনেক কোম্পানি বিকল্প সুযোগ পেয়ে তাদের কাছে অনেক টাকা বাকি রেখে সটকে পড়ছে। তাছাড়া টেরিস্টোরিয়াল লিংকগুলো কম পয়সায় ব্যান্ডউইথ দিতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই শেয়ারিং করে দিচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যে ছয়টি কোম্পানি ভারতের অন্যান্য কোম্পানির কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানি তারা সব মিলে বর্তমানে ৩০ জিবিপিএসের মতো ব্যান্ডউইথ আনছে।

ভারত থেকে আমদানি করা ব্যান্ডউইথের কারণে যেমন বিএসসিসিএলের ব্যান্ডউইথের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে না তেমনি কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহকের সংখ্যাও কমেছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে মূল্য কমাতে বাধ্য হয়েছে কোম্পানিটি। বর্তমানে বিএসসিসিএলের হাতে ২০০ জিবিপিএস উদ্বৃত্ত ব্যান্ডউইথ রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ অব্যবহৃত পড়ে থাকছে। তাই মূল্য কমিয়ে হলেও ব্যবহার বাড়তে নতুন এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিএসসিসিএল অবশ্য অভিযোগ করছে, ভারত থেকে আমদানি করা ব্যান্ডউইথের মান খুবই খারাপ। কিন্তু শুধু কম দামের কারণেই ব্যবহারকারীরা ওই দিকে ঝুঁকছে। এদিকে সরকার নীতিগতভাবে নিজেদের ব্যবহারের বাইরে থাকা ব্যান্ডউইথের অর্ধেকটা রফতানির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতিবেশী ভারতের পূর্বদিকের ৭টি রাজ্যেই মূলত ব্যান্ডউইথ রফতানি হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশীও ব্যান্ডউইথ ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন করে ২০ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত পাইকারি মূল্য কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে বোর্ডের মাধ্যমে অনুমোদনের পর তা পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রনালয়ে। অর্থ মন্ত্রনাল‌‌‌য়র সম্মতি পাওয়া গেলে নতুন দর কার্যকর করা হবে। নতুন মূল্য অনুসারে কেউ ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ কিনলে প্রতি এমবিপিএসের পাইকারি মূল্য পড়বে ১ হাজার ৬৮ টাকা। বর্তমানে যা ১ হাজার ৩৩৬ টাকা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে উৎসে ব্যান্ডউইথের মূল্য ছিল ৭৬ হাজার টাকা। ২০০৮ সালের প্রথম প্রান্তিকে এই মূল্য ৪৫ হাজার টাকায় নির্ধারিত হয়। একই বছর জুনের মধ্যেই এই মূল্য পুনঃনির্ধারিত হয় মেগাবাইট প্রতি ২৭ হাজার টাকা। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথমবারের মতো ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ব্যান্ডউইথের মূল্য ২৭ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১৮ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়। ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি ১৮ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। একই বছরের আগস্টে ১৬ শতাংশ মূল্য কমিয়ে ১২ হাজার টাকা থেকে মূল্য ১০ হাজার টাকায় নির্ধারিত হয়। ২০১২ সালের আগস্ট মাসে ২০ শতাংশ হারে ব্যান্ডউইডথের মূল্য কমানো হয়। তখন ১০ হাজার টাকা প্রতি এমবিপিএসের মূল্য নির্ধারিত হয় ৮ হাজার টাকা। এরপর ২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে প্রতি মেগাবিট ব্যান্ডউইথের দাম ৮ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৪ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা কার্যকর হয় ১ এপ্রিল থেকে। তখন বিটিসিএল থেকে জানানো হয়, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারসহ (আইএসপি) অন্যান্য উচ্চ ব্যান্ডউইথ গ্রাহকদের জন্য প্রতি এমবিপিএস ব্যান্ডউইথের দাম ৪৮০০ টাকা এবং উচ্চহারে ব্যবহারের পরিমাণের ওপর শতকরা ১৫ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ হারে ছাড় (ডিসকাউন্ট) দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপর সর্বশেষ গত বছর ৩ এপ্রিল ব্যান্ডউইথের দাম আরেক দফা ২ হাজার টাকা কমিয়ে দেয় বিটিসিএল। এপ্রিল মাসের শুরু থেকে প্রতি মেগাবিট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মাসিক চার্জ চার হাজার ৮০০ টাকা থেকে কমিয়ে দুই হাজার ৮০০ টাকা করে প্রতিষ্ঠানটি।

Post a Comment

 
Top