0


শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে, নানা রকম শীতকালীন রোগও বেড়ে চলছে। তবে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে ছোট্টশিশুটি। এই সময়ে নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্ট এ দুটি রোগ প্রিয় শিশুটির জন্য বয়ে আনতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকি। আসুন এ দুটি রোগ ও এর প্রতিকার সম্বন্ধে জেনে নিয়ে আগেই সতর্ক থাকি।
 

নিউমোনয়িার লক্ষণ:
দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস, নবজাতকের ক্ষেত্রে > ৬০ বার/ মিনিট
১ বছরের মধ্যের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে > ৫০ বার/ মিনিট এবং
১-৩ বছরের ক্ষেত্রে > ৪০ বার/মিনিটকে আমরা দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস বলব।

০ বুকের খাঁচার নিচে দেবে যাবে
০ নাকের ডগা ফুলে যাওয়া শ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে।
০ গায়ের তাপমাত্রার উর্ধগতি এমনকি ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইটে উপনীত হতে পারে।
০ বাচ্চার চেহারাতে একটি কানত্মি ও অসুস্থতার ভাব প্রকট থাকে।
০ কাশি: রাত্রিকালীন কাশের প্রকোপ বেশি হতে পারে এবং সকাল ভোরের দিকে।
০ কফ: ছোট্ট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কফ নাও বের হতে পারে।
০ বুকে ঘড় ঘড় আওয়াজ পাওয়া যেতে পারে।
০ এই সব শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত স্ট্রেপটো কক্কাস, হিমোফিলাস ইনফুয়েঞ্জি ও স্টাফাইলো কক্কাস রোগের জীবাণু দ্বারা 
   আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। কিছু ভাইরাসও জড়িত থাকতে পারে।

এক্ষেত্রে করনীয় :
০ বাচ্চার যদি খুব শ্বাসকষ্ট থাকে তাহলে হাসপাতালে নেওয়াই ভাল। তিন মাসের নিচে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কিংবা শিশুর
    শরীর যদি বারে বারে নীল হয়ে আসে তাদের হাসপাতলে ভর্তি করতে হবে।
০ আপনি আপনার পারিবারিক শিশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
০ তবে যদি শ্বাসকষ্ট অতটা না থাকে তাহলে বাসায় চিকিৎসা করা যেতে পারে।

বাড়িতে চিকিৎসা:
০ বাচ্চার জ্বর কমাতে সিরাপ প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন। ওজন অনুযায়ী ১৫ মি.গ্রা./কেজি/ প্রতিবার সেবনে। দিনে ৪ বার উর্ধ্বে ৬ বার পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন। প্যারাসিটামল দেয়ার আধ ঘণ্টা পর কুসুম গরম পানি দিয়ে গা-হাত, পা-মাথা মুছিয়ে দিন আধা ঘণ্টা ধরে।
০ প্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে, তবে এ বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত এ্যামোক্সিসিলিন বা তৃতীয় জেনারেশন সেফিক্সিম ব্যবহার করা যেতে পারে। মনে রাখবেন এ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শেই ব্যবহার করতে হবে। নাক-গলা বাল্ব সাকার দিয়ে পরিষ্কার করলে উপকার পাওয়া যাবে।
০ নাকে নরমাল স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করুন, ১ ফোঁটা করে ২ নাকে ৪ বার/৬ বার দিয়ে পরিষ্কার রাখুন নাসিকা পথ।
০ শ্বাসটান বা বুকের আওয়াজের জন্য আমরা সিরাপ স্যালবিউটামল বা নেবুলাইজেশন মেশিনে বাষ্পায়িত স্যালবিউটামল ব্যবহার করতে পারি।


ব্রংকোলাইটিস বা শিশু হাঁফ এর লক্ষণ:

এক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার মতো বাচ্চা অত অসুস্থ হবে না। বাচ্চা মোটামুটি হাসি-খুশি থাকবে কিন্তু বুকে বাঁশির মতো আওয়াজ থাকবে।
০ অল্প তাপমাত্রা বাড়বে। ১০০ থেকে ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইট হতে পারে। প্রথমে নাক দিয়ে পানি পড়ে তারপর দু’একদিনের মধ্যে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
০ ব্রংকোলাইটিস সাধারণত রেসপিরেটরি ভাইরাস দিয়ে বেশি হয়। তবে অন্য ভাইরাস যেমন ইনফুয়েঞ্জা প্যারা ইনফুয়েঞ্জা এ্যাডিনো ভাইরাস দিয়ে হতে পারে।
০ ২ মাস থেকে ২ বছর এর বয়স সীমা। তবে ৬ মাস থেকে ৯ মাস পর্যন্ত বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রকোপ বেশি হয়।

এক্ষেত্রে করনীয়:
০ বাসায় রেখে চিকিৎসা করাতে পারেন।
০ নাক-গলা পরিষ্কার করতে হবে। বাল্ব সাকার ব্যবহার করতে পারেন।
০ বেশি করে তরল খাদ্য খাওয়াতে হবে।
০ নাকে নর্মাল স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।
০ সাধারণত এ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে না। তবে বাচ্চার বয়স যদি ৩ মাসের নিচে হয় তবে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। যদি নতুন করে বুকে বাড়তি প্রদাহ হয় বা তাপমাত্রা অনেক বৃদ্ধি পায় তবে এ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে।
০ শ্বাসকষ্টের জন্য সিরাপ স্যালবিউটামল বা বাষ্পায়িত স্যালবিউটামল ব্যবহার করা যেতে পারে।
জ্বরের জন্য সিরাপ প্যারাসিটামল ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, বাচ্চার বয়স যদি ৩ মাসের নিচে হয় বা বাচ্চা যদি এ্যান্টিক্যান্সার ড্রাগ খায় বহুদিন ধরে কিংবা বাচ্চা অন্য কোন রোগের কারণে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ বেশ কিছুদিন ধরে সেবন করে সে ক্ষেত্রে ব্রংকোলাইটিস আরো খারাপ হতে পারে।

এমতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করাই শ্রেয়।





Post a Comment

 
Top