0

একজন নারী ও একজন পুরুষের আজীবন একসাথে থাকার ইচ্ছেটাকে বাস্তব রূপ দেয় যে ব্যাপারটি, তা হলো বিয়ে। আর একসাথে না থাকার ইচ্ছেটার যে চূড়ান্ত রূপ তা হলো ডিভোর্স বা তালাক। কেন জাগে এই ইচ্ছে? না কি থাকে এর পেছনেও অনেক অজানা কারণ? জেনে নিন ডিভোর্সের সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করে যে কারণগুলো।

 



শারীরিক-মানসিক সমস্যা
যৌন সমস্যা দাম্পত্যে ফাটল ধরায় খুব দ্রুত। শরীরী প্রেম দাম্পত্যের এক বিশেষ চাহিদা। সেই শরীরই যখন নিয়ন্ত্রণ হারায় তখন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক প্রভাবিত হবেই! যৌন চাহিদার পার্থক্য, ইমপোটেন্স, ফ্রিজিডির মতো যৌনসমস্যা নিয়ে চিকিত্‍সক বা কাউন্সেলরের কাছে যাওয়ার কথা এখনো বেশির ভাগ দম্পতিরই অজানা। ফলে শোবার ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে তৈরি হয় এক তিক্ত, প্রেমহীন পরিবেশ। এই তিক্ততাকে সঙ্গী করেই জীবন কাটিয়ে দেন বেশির ভাগ দম্পতি আর কেউ কেউ আশ্রয় নেন ডিভোর্সের।

পরিস্থিতি এবং পারিপার্শ্বিক কারণ
অনেক সময় স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে তেমন কোনো সমস্যা থাকে না। কিন্ত দেখা যায় যে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সাথে ঠিকমতো মানিয়ে নিতে পারে না পুত্রবধূ বা শাশুড়ি ছেলের ব্যক্তিগত জীবনে খুব বেশি নাক গলাচ্ছেন। বা শাশুড়ি বউমার সাথে ছেলের সামনে এক রকম এবং ছেলের পেছনে আরেক রকম ব্যবহার করেন। এদিকে ছেলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আলাদা সংসার করাও সম্ভব নয়। আলোচনা করেও যখন সমস্যার সমাধান হয় না, তখন বহু ক্ষেত্রেই স্বামী-স্ত্রী আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স
বাড়ির এক বা একাধিক সদস্য মিলে যখন অন্য কোনো সদস্যের ওপর শারীরিক, মানসিক নির্যাতন চালায়, তখন তাকে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বা পারিবারিক অত্যাচার বলা হয়। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন কিন্তু এমনটা মোটেও ভাববেন না যে, পুরুষরা এই পরিস্থিতির আওতার বাইরে। নির্যাতিত ব্যক্তিটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য নানা ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করে অত্যাচারীরা, যার মধ্যে অনেকগুলোই চোখে দেখা যায় না।
ভয় দেখিয়ে, গোপন অপরাধবোধ জাগিয়ে তুলে, অপমানিত করে, লজ্জা দিয়ে, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে অত্যাচারী সদস্যরা পরিস্থিতিটা এমনভাবে তৈরি করে যে, নির্যাতিত ব্যক্তিটি নিজের অজান্তেই হার মানতে বাধ্য হয়। যারা এর থেকে মুক্তি পাবার জন্য মরিয়া হয়ে যান, তারা দ্বারস্থ হন ডিভোর্সের।

তৃতীয় ব্যক্তি
দাম্পত্যের মতো একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ মানেই বিপদের সংকেত। স্বামী বা স্ত্রীর এক বা একাধিক বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়ের সাথে ঘনিষ্ঠতা থাকতেই পারে। কিন্তু সেই ঘনিষ্ঠতার সীমারেখা ঠিক কোথায়? কেউ জানে না। অথবা বলা যায় একেক দম্পতির ক্ষেত্রে এই অদৃশ্য রেখাটি একেক জায়গায় অবস্থিত। কিন্তু আমরা যতই উদার হই না কেন, নিজেদের ব্যক্তিগত গন্ডির ভেতরে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ কেউই মেনে নিতে পারি না। পরকীয়া সম্পর্কের পেছনে থাকতে পারে নানা কারণ। যেমন পুরনো প্রেম, দাম্পত্যে একঘেয়েমি বা শুধুই সাময়িক মোহ বা ইনফ্যাচুয়েশন।

মনের মিলের অভাব
দাম্পত্যের ক্ষেত্রে মনের মিল এক বিশেষ ধরনের বোঝাপড়া যা স্বামী-স্ত্রীকে কাছাকাছি নিয়ে আসে এবং তাদের একসাথে থাকার প্রেরণা যুগিয়ে চলে। বেশির ভাগ দম্পতির বৈবাহিক জীবনে ছোটখাট অমিল থাকেই। তাই ঠিক কী কারণে মনের মিলের অভাব ডিভোর্সের মতো বিপদ ডেকে আনে তা বোঝা খুবই দুরূহ। ডিভোর্সের পেছনে এটা খুবই জটিল একটি কারণ।

তথ্যসূত্র: গীতা হালদার, শিশু বর্ধন এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক, ২০০৩

Post a Comment

 
Top