0

এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও সাবমেরিন ক্যাবল কাটা পড়েছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এশিয়ার দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনকারী সমুদ্রতলদেশীয় একটি ক্যাবল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ কারণে গেল সপ্তাহে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্টারনেট সেবায় ধীরগতি দেখা দিয়েছিল। এরপর চলতি সপ্তাহে ভারতের মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের মাঝামাঝি স্থানে সাবমেরিন ক্যাবল সি-মি-উই-ফোরের রিপিটারে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে শনিবার থেকে বাংলাদেশে ইন্টারনেট যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেছেন, সাবমেরিন ক্যাবল কাটা পড়ার কারণে ইন্টারনেটে ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সমস্যা সমাধানে কিছুদিন সময় লাগবে, স্বাভাবিক গতি পেতে ছয় থেকে সাত দিন লেগে যেতে পারে বলেও তিনি জানান।

মনোয়ার হোসেন জানান, সাবমেরিন ক্যাবলের ‘ওয়েস্ট সেগমেন্টে’ ব্যান্ডউইথ সরবরাহে সমস্যা হওয়ায় ‘ইস্ট সেগমেন্ট’ দিয়ে ব্যাকআপ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ছয়টি ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) দিয়ে বাংলাদেশ ইন্টারনেটে যুক্ত থাকছে। তবে শুধু সাবমেরিন ক্যাবল নয়, আইটিসির মাধ্যমে যারা ব্যান্ডউইথ নিচ্ছেন তারাও ধীরগতির সমস্যায় ভুগছেন।
এ প্রসঙ্গে আইটিসি কোম্পানি ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেডের মুখপাত্র আব্বাস ফারুক বলেন, আইটিসিগুলো একাধিক সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত। আইটিসির মাধ্যমে যারা ব্যান্ডউইথ নিচ্ছেন তারাও সামান্য ধীরগতির সমস্যায় রয়েছেন।

এর আগে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এশিয়ার দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনকারী সমুদ্রতলদেশীয় একটি ক্যাবল বিচ্ছিন্ন হলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্টারনেট সেবায় ধীরগতি দেখা দেয়। এ বিষয়ে ভিয়েতনামের শীর্ষ মোবাইল সার্ভিস অপারেটর ভিয়েটেল মোবাইল গত বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এ ক্যাবল ভিয়েতনাম অংশে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে ক্যাবলটির মেরামতকাজ চলছে, যা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে তিন সপ্তাহ থেকে এক মাস লাগতে পারে। এছাড়া আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপরও মেরামতকাজ নির্ভর করছে। সেটি এখনও মেরামতের কাজ চলছে।

এদিকে ভিয়েতনামের সামরিক বাহিনী পরিচালিত ভিয়েটেল জানায়, ক্যাবল বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অন্য ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বর্তমানে তারা আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্যাবলটি মেরামত না হওয়া অবধি ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর ও জাপানে ইন্টারনেট সেবায় শ্লথগতি বিরাজ করবে। এর প্রভাব বাংলাদেশ-ভারত পর্যন্তও পড়েছে।

এদিকে দেশে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযুক্ত থাকার জন্য একমাত্র ক্যাবলের পাশাপাশি দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত হতে এরই মধ্যে বিএসসিসিএলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সি-মি-উই ফাইভ নামের এ ক্যাবল কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা আজও হয়নি। তবে এজন্য চলতি বছরে দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের ওই প্রকল্পে ১৬টি দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ করবে ফ্রান্সের অ্যালকাটেল। এদিকে সম্প্রতি এ অঞ্চলে এসইএ-এমইএ-ডব্লিউ-৫ কনসোর্টিয়াম কাজ শুরু হয়েছে। এতে যুক্ত হওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশ।

প্রকল্প এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর, লোহিত সাগর এবং ভূমধ্যসাগর। এর গ্রাউন্ড লোকেশন পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অতিরিক্ত রাজস্ব অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। তথ্যপ্রযুক্তি সেবা যেমন- কল সেন্টার, সফটওয়্যার এক্সপার্ট, ডাটা-এন্ট্রি, ফ্রি-ল্যান্সিং ইত্যাদি সেবা বৃদ্ধি করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১৩০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথসহ যুক্ত হবে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে পটুয়াখালীতে ল্যান্ডিং স্টেশন তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। দশ একর জায়গার ওপর অবকাঠামো কাজ করা হবে। বিল্ডিং নির্মাণের জন্য ৩৬০টি পাইলিং করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের ব্যান্ডউইথের পরিমাণ ২শ জিবি। এসইএ-এমই-ডব্লিউই (সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্ট ইউরোপ) নামের কনসোর্টিয়ামের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

প্রকল্পের নাম এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫। ওই ক্যাবলে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের ১৬ দেশ সংযুক্ত হচ্ছে। দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ফ্রান্স, ইতালি, আলজেরিয়া, তিউনেশিয়া, মিসর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমার। প্রকল্পের আওতায় সাগরের নিচ দিয়ে ২৫ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল স্থাপন করা হবে। বাংলাদেশে ক্যাবলটি আসবে সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা ও মিয়ানমার হয়ে। কনসোর্টিয়াম প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার পর্যন্ত ক্যাবল পৌঁছে দেবে। সেখান থেকে বাড়তি ৩০০ কিলোমিটার ক্যাবলের মাধ্যমে এটি পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় নিয়ে যাওয়া হবে। কুয়াকাটাতেই হবে এর ল্যান্ডিং স্টেশন। এরই মধ্যে সেখানে ১০ একর জমি কেনা হয়েছে।


Post a Comment

 
Top