0

দুটো হাড়ের মাঝখানে থাকে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক। এই ডিস্ক শক অ্যাবসরবারের কাজ করে। দুটো হাড়ের দূরত্ব বজায় রাখা, মেরুদণ্ডের নমনীয়তা বজায় রাখা-সহ একাধিক দায়িত্ব পালন করে এই ডিস্ক। সামনে ঝুঁকে কোনো কাজ করার সময় বা ভারী কোনো কিছু তোলার সময় আমরা যে কোনো ব্যথা অনুভব করি তার জন্য প্রধানত দায়ী এই ডিস্ক। স্যান্ডউইচের মতো দুটো হাড়ের মাঝখানে সেঁটে থাকে এই ডিস্ক। 

কোনো আঘাত লাগার ফলে বা আচমকা ঝাঁকুনিতে ডিস্কের পেছনে দুর্বল অংশ ফেটে যায়। ডিস্ক রাপচার হলে ভেতরের নরম জেলিসদৃশ অংশ বাইরে বেরিয়ে এসে নার্ভ কর্ডে চাপ দেয়। ডিস্ক রাপচারকেই চলতি ভাষায় স্লিপড ডিস্ক বলে। যারা অনবরত ওঠা-বসার কাজ করেন বা ভারী ভারী ওজন তোলেন তাদের শরীরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটাও বেশি। ক্রমাগত শারীরিক পরিশ্রম করার ফলে কোমরের পেছনের মাংসপেশি জীর্ণ হয়ে পড়ে। বহুদিন ধরেই যদি অল্প অল্প ব্যথা হতে থাকে (ন্যাগিং পেইন) তাহলে হয়তো সেটা স্লিপড ডিস্কের পূর্বাভাস। বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে বসা, সামনে ঝুঁকে পড়ে কোনো জিনিস তোলা ইত্যাদি অভ্যাস দিনের পর দিন চললে স্লিপড ডিস্ক যেকোনো দিন হতে পারে। আসলে ইন্টারভার্টিব্রাল প্রেশার বাড়লে সেটা ডিস্কের দুর্বল অংশকে ফাটিয়ে দেয়।

লক্ষণ
স্লিপড ডিস্কের প্রাথমিক লক্ষণ হলো ব্যথা। সামান্য ব্যথা থেকে শুরু করে অসহ্য ব্যথা হতে পারে। নার্ভরুটের উপর চাপ পড়ে তার আশেপাশের অংশ ব্যথায় কাবু হয়ে যায়। আঙুল, পায়ের পাতা, হাঁটু ইত্যাদি জায়গায় ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া ওই নির্দিষ্ট জায়গাগুলো অসাড় হয়ে যাওয়া, মাংশপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

জটিলতা ও চিকিত্‍সা
নার্ভ কর্ডের উপর অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি হলে (ম্যাসিভ প্রোল্যাপ্স) দু পায়েই অসাড়তা হতে পারে। কিছু কিছু জটিল অবস্থায় প্যারালাইসিসের সম্ভাবনাও থেকে যায়। লাম্বার প্লেক্সাসের কর্মক্ষমতা একেবারে লোপ পেয়ে গিয়ে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, যার ডাক্তারি নাম কওডা ইকুইনা সিনড্রোম। অপারেশন ছাড়া সেক্ষেত্রে আর কোনো উপায় নেই। আবার ডিস্ক রাপচার হয়ে গেলে এক ধরনের কেমিক্যাল ছড়িয়ে পড়ে যার থেকে প্রদাহ ও অসহনীয় ব্যথা হয়। এই কেমিক্যালটির নাম টিউমার নেক্রোসিস ফ্যাক্টর আলফা বা সংক্ষেপে টিএনএফ। কখনো কখনো রোগীকে এপিডিউরাল স্টেরয়েড ইনজেকশন দিতে হতে পারে। আবার স্লিপড ডিস্কের সাথে অন্যান্য নানা উপসর্গও দেখা দিতে পারে। যেমন হাড়ে টিউবারকুলোসিস বা নার্ভে চাপ সৃষ্টিকারী কোনো টিউমার। তবে যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব। নব্বই শতাংশ স্লিপড ডিস্কের রোগী কিন্তু বিনা অপারেশনেই সুস্থ হয়ে যান। নিয়মিত ওষুধ সেবন, ফিজিওথেরাপি ও সাময়িক বিশ্রাম হলো মূলমন্ত্র।

Post a Comment

 
Top