0

সারাজীবনে একবারও ব্রণ হয়নি এমন মানুষ কমই আছেন। যে দুই-তিন ধরনের ত্বকের সমস্যা আমাদের বিব্রত করে, তার মধ্যে ব্রণ অন্যতম। এ সমস্যাটা মূলত বয়ঃসন্ধিক্ষণের এবং যতটা না শারীরিক, তার চেয়ে বেশি মানসিক। ব্রণ নিয়ে রয়েছে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণাও। বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তরে জেনে নিন এর আদ্যোপান্ত।

ব্রণ আসলে কাকে বলে?
আমাদের ত্বকে প্রধানত তিনটি স্তর থাকে - এপিডারমিস, ডারমিস ও হাইপোডারমিস। এসব স্তরের আবার নানা উপস্তর থাকে, যাতে থাকে নানা ধরনের গ্ল্যান্ড যাদের মধ্যে অন্যতম হলো সেবেশাস গ্ল্যান্ড। এর থেকে চর্বিজাতীয় যে তরল পদার্থ নির্গত হয় তার নাম সেবাম। এই সেবাম ত্বকের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে ত্বকের উপরের ছোট ছোট ছিদ্রের সাহায্যে বাইরে আসে। কোনো কারণে এই ছিদ্র বন্ধ হয়ে গেলে ত্বকের ওপরে ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো দেখা দেয়। এগুলোই হলো ব্রণ। সাধারণত দশ থেকে বিশ বছরের মধ্যে ব্রণ দেখা যায় বেশি।

ব্রণ হওয়ার কারণ কী?
ব্রণের নেপথ্যে একটি হরমোনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে যার নাম অ্যান্ড্রোজেন। কিডনির ওপর অবস্থিত অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড থেকে এই হরমোনটি তৈরি হয়। এছাড়া পুরুষদের টেসটিস এবং মেয়েদের ওভারি থেকেও এটি ক্ষরিত হয়, বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিক্ষণে। এর প্রভাবেই সদ্য কৈশোরে পা রাখা ছেলেমেয়েদের মধ্যে ব্রণে আধিক্য দেখা যায়। এছাড়া বংশগত প্রভাব, মানসিক দুঃশ্চিন্তা, প্রসাধন সামগ্রীর বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ব্রণের জন্য দায়ী।

তেল, ঝাল, টক খেলে কি ব্রণ বাড়ে?
আদতে এগুলোর সাথে ব্রণের কোনো সম্পর্ক নেই। চকলেট, আইসক্রিম, মিষ্টির সাথে ব্রণের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, সেটাও বিতর্কিত বিষয়। তবে যাদের বেশি ব্রণ হয়, তাদের এগুলো খেতে নিষেধ করা হয়।

যৌনতার সাথে কি ব্রণের কোনো সম্পর্ক আছে?
ব্রণের সাথে আসলে যৌনতার কোনো সম্পর্ক নেই। দুটোই বয়ঃসন্ধিক্ষণের সমস্যা, এই আর কী!

ব্রণ কাদের বেশি হয়?
বয়ঃসন্ধিক্ষণে ছেলেমেয়ে উভয়েরই ব্রণ হয়। মেয়েরা পুরুষদের চেয়ে বেশি সৌন্দর্য সচেতন হয় বলে ত্বক বিশেষজ্ঞ বা রূপচর্চাবিদদের কাছে তাদেরই ভিড় বেশি দেখা যায়। অথচ ছেলেমেয়ে উভয়ের মধ্যেই ব্রণ হয় একই হারে। আর মেয়েরা যেহেতু প্রসাধন সামগ্রী বেশি ব্যবহার করে তাই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত ব্রণে তারাই বেশি ভোগে।

ব্রণের চিকিত্‍সা কী?
প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রণের কোনো চিকিত্‍সার প্রয়োজন হয় না। ত্বক এবং চুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাই বড় চিকিত্‍সা। তৈলাক্ত ত্বক ও চুল যাদের, ব্রণ তাদেরই বেশি হয়। অয়েল ফ্রি, ওয়াটার বেসড কসমেটিক ছাড়া অন্য কোনো কসমেটিক ব্যবহার করা উচিত নয়। কোনো চিকিত্‍সাতেই ব্রণ ম্যাজিকের মতো সারে না। এর সাথে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের সম্পর্ক রয়েছে, বয়সন্ধিক্ষণে যা বাড়ে। অথচ ব্রণ থেকে মানসিক দুঃশ্চিন্তা, ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্স, নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা সমস্যা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। প্রয়োজনে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

তথ্যসূত্র: ডা. অমিতাভ ভট্টাচার্য, ত্বক বিশেষজ্ঞ

Post a Comment

 
Top