
আমরা বাঁচার জন্য খাই। অর্থাৎ খাদ্য ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সৃষ্টি জগতে মানব শিশু বেশী অসহায়। মুরগীর বাচ্চা ডিম থেকে ফুটেই খাবারের সন্ধান করে। মায়ের সাথে সাথে খেতে শিখে। গাভীর বাচ্চা জন্ম নিয়েই মায়ের দুধ খেয়ে তিড়িং-বিড়িং করে নাচে। মানব শিশু প্রথম কয়েকমাস খুবই অসহায় থাকে। এজন্য মা-বাবকে শিশুর খাবারের ব্যপারে সচেতন থাকতে হয়। বিশেষ করে মায়ের সাথে শিশুর সম্পর্ক নিবিড়। এ সময় মায়ের খাবারের ব্যপারেও খেয়াল রাখতে হবে। দেহের ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের ক্ষয় হওয়ার কারণে মাকে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি খেতে হবে। তার সাথে প্রতিদিন আধা লিটার দুধও খেতে হবে। বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর আগে এক গ্লাস পানি খেলে সুবিধে হবে।
এ সময় মাকে অতিরিক্ত ঝাল খাওয়ালে চলবে না। ঘুমের (সেডেটিভ) এবং কোষ্ঠশোধনকারী ঔষুধ পোগিটিভ খাওয়া ভাল নয়। এই ঔষুধ বুকের দুধে ক্ষরিত হয়ে শিশুর ক্ষতি সাধন করে। এছাড়া মা যদি অত্যাধিক মসলা জাতীয় খাবার খান, পেঁপে, পেয়াজ, কপি ইত্যাদি খান তাহলে বাচ্চাদের পায়খানা নরম হবে।
মা যদি পুষ্টিমানযুক্ত খাবার খায় তাহলে শিশু পর্য়াপ্ত পরিমানে দুধ পাবে। এজন্য প্রসবের ঠিক পর পরই হালকা তরল জাতীয় খাবার দরকার। দুধ, শরবত, বিস্কুট, মিষ্টি এসব দেয়া যেতে পারে। এছাড়া অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার ভাত, ডাল, শাক-সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফল খাওয়ানো যাবে। এ সময় ফল-ফলাদির মধ্যে আম, কলা, আতা, পেপে, আপেল খেতে পারবে। জেনে বা না জেনে মায়ের দুধ না খাইয়ে আমরা অনেকেই গরু, মহিষ, ছাগল কিংবা ডিবির দুধ শিশুকে খাইয়ে থাকি। নিচের সারনির দিকে তাকালে বোঝা যাবে আসলে গুনগত উপাদানে কোনটি সেরা। (প্রতি ১০০ গ্রাম হিসাবে)

ক্রমিক নং উপাদান গরু মহিষ ছাগল কৌটা মায়ের দুধ
১ প্রোটিন ৩.৫০ ৩.৬০ ৩.৫০ ২.৪৪ ৩.১০
২ ল্যাকটোজ ৪.৮০ ৫.৫০ ৪.৩০ ৮.১৯ ৭.৩০
৩ ক্যালসিয়াম ১২০ ২১০ ১৭০ ১.৪ ২৮
৪ ফসফরাস ৯০ ১৩০ ১২০ ৬৯ ৯৫
৫ আয়রন ০.২ ০.২ ০.৩ ১.২ ১.৪
৬ চর্বি ৩.৮০ ৭.০০ ৪.০০ ৩৮৬ ৩.১০
৭ এনার্জি ৬৭ ১১৭ ৭২ ৭১.৫ ৬৫
অনেকে ব্যবহারে সুবিধা হওয়ার কারণে কৌটার দুধ খাওয়াতে পছন্দ করেন। কিন্তু কৌটার দুধ খাওয়ালে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে মা ও শিশুর বন্ধন ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। শিশুর পাতলা পায়খানা হতে পারে। শ্বাসনালীর প্রদাহ হতে পারে। বেশী বেশী এলার্জী বা বদহজম হতে পারে, বুদ্দিমত্তা কম হতে পারে এবং মা রক্ত স্বল্পতা, ডিম্বাশয় বা স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।
জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে মায়ের দুধ খাওয়ালে ভাল হয়। এক গবেষনায় দেখা গিয়েছে প্রতি বছর ৪ সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বে ৪ মিলিয়নের নবজাতকের মৃত্যু ঘটে, এর মধ্যে ২২ শতাংশ মৃত্যু রোধ করা যায় এক ঘন্টার মধ্যে মায়ের দুধ দেয়ার মাধ্যমে। শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে, আমাদের দেশের অনেক মা সঠিক উপায়ে সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারেন না। ফলে শিশু পর্যাপ্ত পরিমানে দুধ পায়না। কেউ বলতে পারে মা দুধ দিবে-শিশু চুষে চুষে খাবে-এত আবার শিখার কি আছে ? হ্যা ডাক্তার, নার্স অথবা মুরব্বী মহিলাদের নিকট থেকে এব্যপারে শিখার অনেক কিছু আছে। তবে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে উপকার পাওয়া যাবে। ছোট শিশুর মাথা শরীর সোজা থাকবে, শিশুর মুখ মায়ের স্তনের দিকে ফেরানো থাকবে। মা শিশুর পুরো শরীর আগলে রাখবেন। এভাবে খাওয়ানোর সময় শিশু সঠিকভাবে দুধ পাচ্ছে কিনা ? শিশুর শরীর মায়ের শরীরের কাছে আছে কিনা ? শিশুর মুখ মায়ের বুকের দিকে পুরোপুরি ফেরানো কিনা ? খেয়াল রাখবেন। এসময় মুখে স্তনের বোটা এবং তার চারপাশের কালো অংশ ঢুকোনো থাকবে এবং শিশুর দুই গাল ফোলা থাকবে।
সুতরাং গুড়োদুধ কোম্পানীগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপনে না ভুলে কষ্ট করে হলেও আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান। এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। বুদ্ধি বিকশিত হবে। এতে শুধু শিশুর নয় মায়েরও অনেক সুবিধা রয়েছে। তাই যে টাকা দিয়ে গুড়ো দুধ কিনবেন তা দিয়ে মায়ের জন্য পুষ্টিকর খাবার কিনেন এবং ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ান। মনে রাখবেন এটি শিশুর জীবনের প্রথম টিকা।
সূত্র: রূপ কেয়ার
Post a Comment